কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:

করোনা ভাইরাস (কোভিড-19) সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ফসল সংগ্রহ বা ব্যবস্থাপনার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য দিক নির্দেশনা মেনে চলুন।

আবহাওয়া পরিস্থিতি ও কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:

মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র প্রবল অবস্থায় রয়েছে। 

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলার অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। 

দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।  

এই পরিস্থিতিতে নিম্নলিখিত কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ প্রদান করা হলো।

আমন ধান :

• জমিতে অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে নিষ্কাশন করুন এবং সর্বোচ্চ কুশি পর্যায় পর্যন্ত জমির পানির স্তর ৫-৭ সেমি রাখুন।
• ১১, ১২, ১৩ তারিখে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় ১৩ সেপ্টেম্বরের পর জমিতে আন্ত পরিচর্যা করুন।
• চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর প্রথমবার, ৩০-৩৫ দিন পর দ্বিতীয়বার আগাছা নিধন করতে হবে।
• চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর এক তৃতীয়াংশ নাইট্রোজেন সার উপরিপ্রয়োগ করুন। বৃষ্টিপাতের পর এই কাজ করতে হবে।
• নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করুন। মাজরা পোকা, পামরি পোকা, চুঙ্গী পোকা, গল মাছির আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য আলোক ফাঁদ ব্যবহার করুন।
• চারা ও কুশি পর্যায়ে পাতা মোড়ানো পোকা বা পামরী পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। যদি একটি গোছায় পাতা মোড়ানো পোকা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ একটি পাতা দেখা যায় অথবা একটি পামরী পোকার উপস্থিতি চোখে পড়ে তাহলে বৃষ্টিপাতের পর প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ মিলি ক্লোরোপাইরিফস ২০ ইসি বা মনোক্রোটোফস ৪০ ইসি মিশিয়ে স্প্রে করুন।
• মাজরা পোকা অথবা পাতা খেকো পোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্রতি একরে ১২ কেজি হারে কার্বোফুরান ৩ জি প্রয়োগ করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

সবজি:

• জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করুন।
• ব্যাভিস্টিন অথবা ম্যানকোজেব দিয়ে শোধন করে আগাম বাধাকপি ও ফুলকপির বীজ বপন করুন।
• মূল জমিতে টমেটো, বেগুন ও মরিচের চারা রোপণ করুন।
• জো অবস্থা আসতে দেরী হলে বস্তা পদ্ধতিতে লতা জাতীয় সবজির চাষ করা যায়।
• বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা দিলে আক্রান্ত ফল ও ডগা সরিয়ে ফেলুন ও ৫% নিম বীজ নির্যাস স্প্রে করুন।
• ঢেঁড়শের লাল মাকড় আক্রমণ করলে ৫% নিম বীজ নির্যাস স্প্রে করুন।
• টমেটোর ফল পচা রোগ দেখা দিলে মাটির ১৫ থেকে ২০ সেমি ওপরের হলুদ পাতা কেটে নিয়ে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে এবং প্রতি ১০০ লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম ম্যানকোজেব অথবা রিডোমিল মিশিয়ে ৮-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
• উচ্চ তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতায় বেগুন ও পেঁপের পাতা কোকড়ানো রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ মিলি রগর অথবা ডাইমেথয়েট মিশিয়ে স্প্র করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক স্প্রে করুন।

উদ্যান ফসল:

• জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করুন।
• আম, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা, জাম, লেবুর নতুন চারা রোপণ করুন। অতিবৃষ্টিতে রোপিত চারা নষ্ট হয়ে থাকলে সেখানে নতুন চারা লাগিয়ে শূণ্যস্থানগুলো পূরণ করতে হবে।
• ডালিমের পাতা পোড়া বা লেবুর লিফ মাইনর প্রভৃতি রোগের জন্য উদ্যান ফসলে বালাই ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
• ডালিমের ব্লাইট ও ফল পচা রোগ থেকে রক্ষার জন্য ২০০ লিটার পানিতে ৬০০ গ্রাম ম্যানকোজেব ও ১০০ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম মিশিয়ে স্প্রে করুন। থ্রিপস পোকার আক্রমণ হলে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি স্পাইনোসাড ২.৫ এসসি মিশিয়ে স্প্রে করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক স্প্রে করুন।

আখ:

• জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করুন।
• প্রয়োজন অনুযায়ী আন্ত পরিচর্যা করুন।
• জমি সুনিষ্কাশিত রাখুন।
• রেড রট রোগ থেকে বাঁচার জন্য জমিতে পানি জমতে দেবেন না এবং আক্রান্ত আখ তুলে ফেলুন।
• টপ শুট বোরার নিয়ন্ত্রণের জন্য বালাই ব্যবস্থাপনা করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক স্প্রে করুন।

হলুদ:

• জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করুন।
• উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় হলুদের পাতায় দাগ রোগ দেখা দিলে বৃষ্টিপাতের পর হেক্টর প্রতি ১ কেজি হারে ম্যানকোজেব প্রয়োগ করুন।
• রাইজোম পচা রোগ হলে বৃষ্টিপাতের পর আক্রান্ত জায়গায় প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে 0.3% ম্যানকোজেব ৭৫ ডব্লিউপি প্রয়োগ করুন।
• জমি সুনিষ্কাশিত রাখুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক স্প্রে করুন।

কলা:

• কলাগাছ রোপণ করুন। আন্ত পরিচর্যা করতে হবে।
• জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করুন।
• মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে কলায় সিগাটোকা রোগ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আক্রান্ত পাতা কেটে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন। আক্রমণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ১% বোর্দো মিক্সচার ১৫ দিন পর পর ৫ থেকে ৬ বার স্প্রে করুন।
• রোগ বালাই এর আক্রমণ বেশি হলে আক্রান্ত গাছ কেটে সরিয়ে ফেলতে হবে যাতে রোগ ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক স্প্রে করুন।

তুলা:

• তুলা বপন করুন।
• আর্দ্র আবহাওয়ায় রোগবালাই এর আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। সঠিক অবস্থা জানার জন্য নির্দিষ্ট ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করুন। আক্রমণ বেশি হলে বৃষ্টিপাতের পর অনুমোদিত বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।
• জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক স্প্রে করুন।

পান:

• ঝোড়ো হাওয়ায় যেন ভেঙে না যায় সেজন্য পানের বরজে শক্ত করে বেড়া দিন।
• নিষ্কাশন নালা পরিষ্কার রাখুন এবং বরজের ভেতরে মুক্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করুন।
• জমিতে কাটিং লাগানোর জন্য রোগমুক্ত কাটিং নির্বাচন করতে হবে এবং লাগানোর আগে ০.৫% বর্দো মিক্সচার ও ৫০০ পিপিএম স্ট্রেপ্টোসাইক্লিন দিয়ে আধ ঘণ্টা শোধন করে নিতে হবে। লাগানোর আগে মাটিতে ম্যানকোজেব ৭৫ ডব্লিউপি (প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে) প্রয়োগ করতে হবে।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক স্প্রে করুন।

 

গবাদি পশু:

• গবাদি পশুর খুরা রোগ দেখা দিলে-
  • শুধুমাত্র শুকনো খাবার খাওয়ান
  • গোয়ালঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখুন
  • গোয়ালঘরে জীবাণুনাশক যেমন ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করুন
  • পানিতে নিমজ্জিত মাঠে গবাদি পশুকে যেতে দেওয়া যাবে না
  • মুখে ও পায়ে ক্ষত দেখা দিলে ক্ষতের জায়গাটি পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে দিন
• গবাদি পশুকে নিয়মিত টীকা প্রদান করুন।
• যে কোন রোগের লক্ষণ দেখা দিলে যথাযথ চিকিৎসার জন্য দ্রুত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

হাঁসমুরগী:

• খোয়াড়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করে তারপর হাঁসমুরগী রাখুন।
• চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টীকা প্রদান করুন।
• শুকনো খাবার খেতে দিন এবং পরিষ্কার পানি পান করান।
• বর্তমান আবহাওয়ায় হাঁসমুরগীর অন্ত্রের পরজীবীর আক্রমণ হতে পারে। সেজন্য খোয়াড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

মৎস্য:

• পুকুরের চারধার মেরামত করে দিন যেন মাছ পুকুরের বাইরে বের হয়ে যেতে না পারে।
• পুকুর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিন।
• যথেষ্ট পানি আছে, কাজেই পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ুন।
• পোনা ছাড়ার আগে অপ্রয়োজনীয় মাছ বের করে নিন।
• যে কোন পরামর্শের জন্য স্থানীয় মৎস্য অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখুন।