আবহাওয়া ভিত্তিক কৃষি বিষয়ক বুলেটিন জেলা: বান্দরবান

 

গত ৪ দিনের আবহাওয়া পরিস্থিতি ২৭.০৮.২০২২ থেকে ৩০.০৮.২০২২ তারিখ পর্যন্ত

আবহাওয়ার স্থিতিমাপ(প্যারামিটার)	২৭.০৮.২০২২	২৮.০৮.২০২২	২৯.০৮.২০২২	৩০.০৮.২০২২	সীমা
বৃষ্টিপাত (মি.মি)	৭.০	০.০	০.০	০.০	০.০-৭.০ (৭.০)
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড)	২৯.০	৩২.৩	৩৩.০	৩৩.২	২৯.০-৩৩.২
সর্বনিমণ তাপমাত্রা (ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড)	২৫.৪	২৪.৫	২৫.০	২৫.৫	২৪.৫-২৫.৫
আপেক্ষিক আর্দ্রতা (শতকরা)	৮৩.০-৯২.০	৬৮.০-৯২.০	৭২.০-৯৫.০	৬৭.০-৯৫.০	৬৭.০-৯৫.০
বাতাসের গতিবেগ (কিমি/ ঘন্টা)	৫.০	৬.৩	৫.৯	৫.৬	৫.০-৬.৩
বাতাসের দিক	South/South-westerly	South/South-westerly	South/South-westerly	South/South-westerly	South/South-westerly
মেঘের পরিমান (অক্টা)	৫	৩	৪	৪	৩.৩-৫.১

 

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর হতে প্রাপ্ত আগামী ৫ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস ৩১.০৮.২০২২ থেকে ০৪.০৯.২০২২ তারিখ পর্যন্ত

আবহাওয়ার স্থিতিমাপ(প্যারামিটার)	৩১.০৮.২০২২	০১.০৯.২০২২	০২.০৯.২০২২	০৩.০৯.২০২২	০৪.০৯.২০২২	সীমা
বৃষ্টিপাত (মি.মি)	১.৪	৪.৬	৩.৬	৪.৫	২.৮	১.৪-৪.৬ (১৭.০)
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড)	৩০.৮	৩০.১	২৯.৬	২৯.৭	৩০.০	২৯.৬-৩০.৮
সর্বনিমণ তাপমাত্রা (ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড)	২৩.৬	২৩.২	২৩.০	২৩.৯	২৪.২	২৩.০-২৪.২
আপেক্ষিক আর্দ্রতা (শতকরা)	৮১.৬-৯৪.৯	৮৬.৭-৯৪.২	৯১.৭-৯৪.৯	৮৭.৪-৯৪.৮	৮৫.৫-৯৩.৪	৮১.৬-৯৪.৯
বাতাসের গতিবেগ (কিমি/ ঘন্টা)	৬.৬	৬.৩	৭.০	৯.৫	১৩.৪	৬.৩-১৩.৪
বাতাসের দিক	South/South-westerly	South/South-westerly	South/South-westerly	South/South-westerly	South/South-westerly	South/South-westerly
মেঘের পরিমান (অক্টা)	আংশিক মেঘলা	আংশিক মেঘলা	আংশিক মেঘলা	আংশিক মেঘলা	আংশিক মেঘলা	আংশিক মেঘলা

কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:

করোনা ভাইরাস (কোভিড-19) সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ফসল সংগ্রহ বা ব্যবস্থাপনার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য দিক নির্দেশনা মেনে চলুন।

আবহাওয়া পরিস্থিতি ও কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ:

মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। 

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলার অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। 

দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে নিম্নলিখিত কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ প্রদান করা হলো।

আউশ ধান:

থোড় থেকে সংগ্রহ পর্যায়-

• জমির পানির স্তর ৫-৭ সে.মি. বজায় রাখুন। শক্ত দানা পর্যায় থেকে জমির পানির স্তর ২-৩ সে.মি. বজায় রাখুন।
• মাজরা পোকা, গল মাছি এবং সাদা ও বাদামী গাছ ফড়িং আক্রমণ করলে প্রতি হেক্টরে ৩৩ কেজি কার্বোফুরান ৩জি প্রয়োগ করুন। কাটুই পোকার আক্রমণ হলে ক্লোরোপাইরিফস বা ডাইক্লোরোভস প্রয়োগ করুন।
• মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। এটি ট্রাইকোগ্রামা ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
• খোল পোড়া রোগ থেকে বাঁচাতে আইল ঘাসমুক্ত পরিষ্কার রাখুন।
• আউশের পাতায় ব্লাস্ট ও দাগ রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম মিশিয়ে স্প্রে করুন।
• গান্ধী পোকা ও বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রমণ দেখা দিতে পারে। গান্ধী পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম কার্বারিল ৫০ ডব্লিউপি মিশিয়ে স্প্রে করুন। অতিরিক্ত সেচ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে যেন গোড়া পচে না যায়। ধান ৮০% পরিপক্ক হয়ে গেলে বৃষ্টিপাতের পর সংগ্রহ করে দ্রুত নিরাপদ জায়গায় রাখুন। বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য অনুমোদিত বালাইনাশক প্রয়োগ করুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করার সময় কৃষকদের মধ্যে যথাযথ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
• ফসল সংগ্রহের ১৫ দিন আগে জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করে ফেলুন।
• ফসল ৮০% পরিপক্ক হয়ে গেলে রৌদ্রজ্জ্বল দিনে সংগ্রহ করুন।
• বিকেলে অথবা সকাল ১০.০০ টা থেকে ১১.০০ টার মধ্যে বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

আমন ধান:

• দ্রুত চারা রোপণ সম্পন্ন করুন।
• যে কোন কারণে চারার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে সেখানে একই বয়সের সুস্থ চারা রোপণ করুন।
• হলুদ মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি হেক্টরে ১০ কেজি হারে কার্বোফুরান স্প্রে করুন।
• হালকা বা মাঝারী বৃষ্টিপাতের পানি যেন বের হয়ে যেতে না পারে সেজন্য শক্ত করে জমির আইল তৈরি করুন।
• চারা খুব গভীরে রোপণ করবেন না। কোন চারা নষ্ট হলে এক সপ্তাহের মধ্যে সেখানে নতুন চারা লাগান।
• জমি আগাছামুক্ত রাখুন। চারা রোপণের ১-৩ দিনের মধ্য অনুমোদিত আগাছানাশক প্রয়োগ করুন।
• চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর এক তৃতীয়াংশ নাইট্রোজেন সার উপরিপ্রয়োগ করুন।
• পামরী পোকার আক্রমণ দেখা দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নিন।
• সর্বোচ্চ কুশি পর্যায়ে লীফ রোলার, সবুজ পাতা ফড়িং, ব্লাস্ট, ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট, উফরা, খোল পোড়া, পাতা পোড়াসহ বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিতে পারে। নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

 

সবজি:

• আগাম শীতকালীন সবজি চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করুন।
• বর্ষাকালে চারার ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিন।
• জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য নিষ্কাশন নালা পরিষ্কার রাখুন।
• আগাছা নিধন ও অন্যান্য আন্ত:পরিচর্যা করুন।
• ফলের মাছি পোকা, লাল কুমড়া বিটল, এপিলাকনা বিটল এর আক্রমণ হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি ম্যালাথিয়ন ৫০ ইসি মিশিয়ে প্রয়োগ করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

উদ্যান ফসল:

• আম বাগানের আন্ত:পরিচর্যা করতে হবে।
• ডালিমের পাতা পোড়া বা লেবুর লিফ মাইনর প্রভৃতি রোগের জন্য উদ্যান ফসলে বালাই ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
• কলা গাছ লাগান এবং বাগানে আন্ত:পরিচর্যা করুন।
• ঝোড়ো হাওয়ার কারণে ঢলে পড়া থেকে রক্ষার জন্য কলাগাছে খুঁটির ব্যবস্থা করুন।
• কলায় সিগাটোকা রোগের আক্রমণ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হেক্সাকোনাজল অথবা ১ মিলি প্রোপিকোনাজল মিশিয়ে পাতার দুইপাশে স্প্রে করুন।
• পেঁপের ছাতরা পোকার আক্রমণ হলে অনুমোদিত বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

পান:

• জমিতে কাটিং লাগানোর জন্য রোগমুক্ত কাটিং নির্বাচন করতে হবে এবং লাগানোর আগে ০.৫% বর্দো মিক্সচার ও ৫০০ পিপিএম স্ট্রেপ্টোসাইক্লিন দিয়ে আধ ঘণ্টা শোধন করে নিতে হবে।
• কাণ্ড পচা বা গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে রোগাক্রান্ত পান গাছ বা গাছের অংশ নির্দিষ্ট গর্তে ফেলুন অথবা পুড়িয়ে ফেলুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

আখ:

• কান্ড পঁচা রোগ ও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করুন।
• রোগ বা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে অনুমোদিত বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।
• বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু:

• গবাদি পশু অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় রাখুন।
• গোয়ালঘরে যেন বৃষ্টির পানি জমতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
• গোয়ালঘরে জীবাণুনাশক যেমন ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করুন
• পানিতে নিমজ্জিত মাঠে গবাদি পশুকে যেতে দেওয়া যাবে না
• গবাদি পশুকে কৃমিনাশক প্রদান করুন।
• গবাদি পশুর খুরা রোগ দেখা দিলে-
  • শুধুমাত্র শুকনো খাবার খাওয়ান
  • গোয়ালঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখুন
  • মুখে ও পায়ে ক্ষত দেখা দিলে ক্ষতের জায়গাটি পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে দিন
• সুস্থ গবাদি পশুকে নিয়মিত টীকা প্রদান করুন।
• যে কোন রোগের লক্ষণ দেখা দিলে যথাযথ চিকিৎসার জন্য দ্রুত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

হাঁসমুরগী:

• হাঁসমুরগীকে ভেজা খাবার খেতে দেবেন না।
• কৃমিনাশক প্রদান করুন।
• খোয়াড়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করে তারপর হাঁসমুরগী রাখুন।
• চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টীকা প্রদান করুন।
• শুকনো খাবার খেতে দিন এবং পরিষ্কার পানি পান করান।
• বর্তমান আবহাওয়ায় হাঁসমুরগীর অন্ত্রের পরজীবীর আক্রমণ হতে পারে। সেজন্য খোয়াড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
• তাপমাত্রা বেড়ে গেলে খোয়াড়ে পানি স্প্রে করুন।

মৎস্য:

• পুকুরের চারধার মেরামত করে দিন যেন মাছ পুকুরের বাইরে বের হয়ে যেতে না পারে।
• পুকুর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিন।
• যথেষ্ট পানি আছে, কাজেই পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ুন।
• পোনা ছাড়ার আগে অপ্রয়োজনীয় মাছ বের করে নিন।
• যে কোন পরামর্শের জন্য স্থানীয় মৎস্য অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখুন।